খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
কেমনে আসে যায়
ধরতে পারলে মন-বেড়ী
দিতাম তাহার পায়।
চলতি কথায় গেল দেহতত্বের গান। এই গানের মূল মর্ম কথা হলো, মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। আজ যারা বেঁচে আছে- কাল তারা মারা যেতে পারে। কিন্তু কোন ভাবে যদি জীবনকে অর্থাৎ সময়কে বেঁধে রাখা যেতো- তাহলে মৃত্যু আসতো না। এখানে খাচার ভেতর অচিন পাখিকে প্রতিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে আমাদের দেহরূপ খাঁচার প্রাণপাখিকে। আসলেই সেটা কোন দিক থেকে আসে আর কোন দিক থেকে চলে যায় কেউ জানে না। যদি কোনভাবে এই প্রাণ পাখিকে দেহের মধ্যেই আটকে রাখা যেত- তাহলে আমরা সবাই অমর হয়ে যেতাম। মৃত্যুকে জয় করতে পারতাম।
এই গানখানা লিখেছিলেন আমাদের এই বাংলাদেশে হাজার হাজার গ্রাম-বাংলার অতি জনপ্রিয় বাউল সাধক লালন ফকির- পুরো নাম লালন ফকির শাহ। গানটি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকে পর্যন্ত এমনভাবে মোহিত করেছিলেন যে, তিনি গানটি ইংরেজিতে অনুবাদ পর্যন্ত করে ফেলেছিলেন। ১৯২৫ সালে ভারতীয় দর্শন মহাসভায় ইংরেজি বক্তৃতা দেবার সময় তিনি গানটা উদ্বৃত্ত করে তিনি বলেছিলেন, কোন এক অজ্ঞাত গ্রামের অখ্যাত গীতিকার এবং সুরকারের এই গানে অচিন পাখির পাখার শব্দ সাধারন চাষীর মনেও এনে দিতে পারে অবাক করা মরমী অনুভব।
অখ্যাত গ্রামের এক অখ্যাত শিল্পী লালন ফকির সে সময় সভ্যজগতে পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু গ্রামীণ পরিবেশে তার গানগুলো খুবই প্রিয় ছিল। তার গান অত্যন্ত সহজেই স্পর্শ করতো সাধারণ মানুষের হৃদয়কে। গলায় গানের সুর বেঁধে তিনি যেতেন তার শিষ্যদের বাড়ি, আবার শিষ্যরাও আসতো দল বেঁধে তার কাছে গানের টানে, সুরের টানে। এই অখ্যাত শিল্পীর জন্ম কত সালে তা নিয়ে বিস্তর মতানৈক আছে। কেউ কেউ বলেন ১৭৭৪ সালে- কেউবা বলেন ১৭৭৭। এদেশে তখন চলছে ইংরেজের শাসনামল। গ্রামের মানুষ দুঃখে দারিদ্রে, অশিক্ষা আর অস্বাস্থ্যে খুবই করুণ জীবনযাপন করতেন। তাঁদের কাছে একটু আশার কথা শোনাবে কিংবা লেখাপড়ার শেখার প্রয়োজন বিষয়ে বলবে এমন লোকই বা কই? সেই ব্যধিপীড়িত করুণ দুর্বল অসহায় মানুষগুলোর কাছে বাউল ফকির দরবেশেরা খুব যেতেন, নিজেদের গান শুনিয়ে চাঙ্গা করে তুলতেন। মানুষের কথা বলতেন তারা। কাঠের মূর্তি, মাটির ঢিবি উপসনা কিংবা জিন বা পরীর অলৌকিকতার বিরুদ্ধে বলতেন তাঁরা। কুসংস্কার প্রতিবাদে গান বাঁধতেন। কিন্তু এ ধরনের লৌকিক সাধকদের কথা আমরা তেমন করে জানতে পাই না, কারণ শিক্ষিত সমাজে, খবরের কাগজে বা শিক্ষার পাঠ্যক্রম এদের উপেক্ষা করা হয়েছে বরাবর। পরাধীন ভারতবর্ষে শাষক ইংরেজ যেমন করে আমাদের ইতিহাস পড়িয়েছেন তাতে দেশের সত্য চেহারা বা অন্তরের পরিচয় ফুটে উঠেনি। কত সাধক, ফকির আর দরবেশ কালের অতলে হারিয়ে গেছেন- অনেকে তাদের নাম পর্যন্ত জানেন না। অথচ ইংরেজ অধীন জর্জরিত দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এদের অবদান কোন অংশে কম নয়। তাদেরই একজন ছিলেন লালন শাহ ফকির। মানুষের একেবারে মনের কাছে পৌঁছে যেত তার গান। উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতেন অখ্যাত গ্রামের আরও অখ্যাত চাষা-ভূষোদের। লালনের জন্ম আর জীবন-যাপন সম্পর্কে এতো বিচিত্র তথ্য পাওয়া যায় যে, তার মধ্যে থেকে আসল তথ্য উদঘাটন করা সত্যিই কষ্টকর। অনেকে বলেন লালন না'কি ১১৬ বছর জীবিত ছিলেন। জাত সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন লালন কায়স্থ ছিলেন। কেউ বলেন তিনি মুসলমান ছিলেন। তবে তার মৃত্যু সংবাদ ছাপা হয়েছিল কুষ্টিয়ার স্থানীয় একটি পাক্ষিক পত্রিকা ‘হিতকরি’-তে। সেখানে লালনের মৃত্যু সংবাদের সঙ্গে যে- নিবন্ধন (১৮৯০, লেখক অজ্ঞাত) ছাপা হয় তাতে খুব হালকাভাবে বলা হয়েছিল-
‘‘সাধারণে প্রকাশ লালন ফকির জাতিতে কায়স্থ ছিলেন। কুষ্টিয়ার অধীন চাপরা ভৌমিক-বংশীয়েরা তাদের জাতি। তাহাদের কোন আত্মীয় জীবিত নাই। ইনি নাকি তীর্থ গমনকালে পথে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হইয়া সঙ্গিগণ কর্তৃক পরিত্যক্ত হন। মুমূর্ষু অবস্থায় একটি মুসলমানের দয়া ও আশ্রয়ে জীবন লাভ করিয়া ফকির হন। তাহার মুখে বসন্তরোগের দাগ বিদ্যমান ছিল।’’
এই নিবন্ধটি যিনি লিখেছেন, সম্ভবত লালনকে সামনা-সামনি দেখেছিলেন বলে বসন্ত রোগের দাগের উল্লেখ করেছেন। তীর্থ করতে গিয়ে বসন্ত হওয়া এবং পরিত্যক্ত হওয়ার ঘটনা আর সেই সঙ্গে কোনো মুসলমানের দয়ায় বাঁচা তিনি লোকমুখে শুনেছেন।
পরবর্তীতে কুষ্টিয়াযর ধর্মপাড়ার বাসিন্দা বসন্তকুমার পাল এককভাবে লালনের জীবন ও রচনা সম্পর্কে বহুতর খোঁজখবর করেছেন প্রান্ত কুমার সারা জীবনই লালনচর্চা করেও তাঁর রচনার সম্পর্কে বহুতর খোঁজখবর করেছেন। বসন্ত কুমার সারাজীবনই লালনচর্চা করে গেছেন। তার তথ্য থেকে জানা যায় ধর্মপাড়ার পাশের গ্রাম ভাঁড়ারায় নাকি লালনের জন্ম। শৈশবে সেই সুবাদে বসন্তকুমার গ্রামের লোকের মুখে মুখে লালনের জীবন কাহিনী শুনে কৌতুহলী হন এবং ঐ সম্পর্কে বিশদ খবরাখবর নিতে থাকেন।
আরও বিস্তারিত পড়ুন => https://www.lalongiti.com/p/blog-page_23.html
এই এপসে আপনি পাবেন-রবি, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, এয়ারটেল, টেলিটক সিমের প্রয়োজনীয় কোড সমূহ-যেমন,...
এখানে পাওয়া যাবে• কিশোরগঞ্জ জেলার সকল হসপিটাল সমূহের তথ্য• ফায়ার সার্ভিস এর...
পতিতাদের জীবন, যৌবন ও পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে মানুষের কৌতুহলের অন্ত নাই। সমাজের মানুষ...
লালন (ইংরেজি: Lalon) (জন্ম ১৭৭৪- দেহত্যাগ করেন অক্টোবর ১৭, ১৮৯০) একজন বাঙালী...
আসসালামু আলাইকুম ...প্রিয় দ্বীনি ভাই বোনদের জন্য আমার এই ছোট্ট উপহার।...
ব্যস্ত সময়ে চলতে ফিরতে কাজের ফাঁকে যখনি একটু সুযোগ পাওয়া যায় মুহুর্তে...
Created with AppPage.net
Similar Apps - visible in preview.