সিয়াম, জাকাত, হজ্ব, কোরবানী এবং অন্যান্য সকল ধর্মানুষ্ঠানের মূল চাবিকাঠি হইল সালাত। “ধর্ম” অর্থ চযবহড়সবহড়হ সপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বার দিয়া যাহা কিছু মস্তিষ্কে প্রবেশ করে তাহার সব কিছুকে ধর্ম বলে। ধর্মগুলির প্রতি মোহাবিষ্ট হইয়া মস্তিষ্কে ধরিয়া রাখিলে সেগুলি মানুষকে সৃষ্টির সঙ্গে ধরিয়া রাখে। ইহাকেই বলা হয় সংস্কার বা শিরিক। সুতরাং মনের মধ্য দিয়া আগমনকারী ধর্ম সকলের মোহ গ্রহণযোগ্য নয়, বরং পরিত্যাজ্য। ধর্মের মোহ পরিত্যাগ করিবার অনুশীলনকে সালাত বলে।
সিয়াম অর্থ ধর্ম পরিহার বা পরিত্যাগ। পরিত্যাগ করার অনুশীলন (Practice) বা পদ্ধতি হইল সালাত। জাকাত অর্থ আমিত্বের উৎসর্গ। Denial of the self or the ego. আমিত্বের উৎসর্গ কখনও হইতে পারে না যদি ধর্মসমূহকে মোহ দ্বারা ধরিয়া রাখা হয়। ধরিয়া রাখিলে পুনর্জন্মের উপাদান সৃষ্টি হয় এবং তাহা দ্বারা মানবীয় অস্তিত্ব বা আমিত্ব দীর্ঘায়িত হয়। এইরূপ দুষ্ট আমিত্বের নিরসন করিতে চাহিলে সালাত করা অপরিহার্য। সুতরাং জাকাতের চাবিকাঠি সালাত। এই কারণে সালাত ও জাকাতের উল্লেখ অবিচ্ছেদ্যভাবে একযোগে করা হইয়াছে কোরানে বহুবার।
কোরান বলিতেছেন ঃ “হজজুল বাইতা” অর্থাৎ গৃহটির হজ্ব কর। হজ্ব অর্থ অণু অণু করিয়া খুঁটিয়া খুঁটিয়া দেখা। আপন মানব দেহ ও মনকে অণু অণু করিয়া দেখা। বিশ্ব মানব দেহের প্রতীক জাহেরী ঘর হইল কাবা ঘর। নফস দর্শন তথা আত্মদর্শনকে সালাত বলে। “নফস দর্শন” অর্থ অসারতা দর্শন, অনাত্মা দর্শন। সুতরাং সালাত এবং হজ্ব একই বিষয়ের দুইরূপ বা দুই পর্যায় মাত্র। হজ্ব আত্মদর্শনের তথা আত্মত্যাগের চরম পর্যায় এবং সালাত হইল উহার প্রাথমিক এবং মৌলিক পর্যায়। সালাত সংসার জীবনের মধ্যে থাকিয়া গৃহের সহায়ক পরিবেশের মধ্যে ধর্মসমূহের স্বরূপ দর্শন করা আর হজ্ব বিশ্ব নাগরিক হইয়া অসীম মহা প্রকৃতির মধ্যে গৃহহারা অবস্থায় আপন রূপ দর্শন করা।
হজ্ব সমাপনের দ্বারা পরিপূর্ণ আত্মদর্শন লাভ করিয়া পরমের জ্ঞানে জ্ঞানী হইয়া মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করার নাম কোরবানী। সুতরাং সালাতের অনুশীলন ব্যতীত কোরবানী করা অসম্ভব। এইরূপে দেখা যায় সালাত কোরবানীর চাবিকাঠি। কোরানে কোরবানী বুঝাইতে যে শব্দ ব্যবহার করা হইয়াছে তাহা হইল “জবেহ”। জবেহ অর্থ পবিত্র করা, শুদ্ধ করা। জিন এবং ইনসান জাতির মস্তিষ্কের অপবিত্রতা এবং কলুষ-কালিমা ধোলাই করিয়া শুদ্ধ ও পবিত্র করিয়া তোলার জন্যই কোরবানী। সমাজ শুদ্ধির জন্য প্রতিটি সমাজের দুই একজনকে কোরবানী হইতেই হইবে। নতুবা প্রকৃত সমাজ কল্যাণ সুদূর পরাহত।