১। আল্লাহ এবং তাঁহার রাসুলের পরিচয়কে ‘আয়াত’ বলে। ‘আয়াত’ শব্দটি কোরানে শতাধিকবার উল্লেখিত আছে, কিন্তু ইহাদের অর্থ একবারও কোরানের একটি বাক্য অর্থে ব্যবহৃত হয় নাই। বাক্য অর্থ বুঝাইতে চাহিলে কোরানে উহাকে কালাম বলা হইত। আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থে এক একটি বাক্যকে এক একটি ‘আয়াত’ বলিয়া থাকি এইজন্য যে, এইগুলি আল্লাহ ও তাঁহার রাসুলের পরিচয় দানকারী বাক্য বিশেষ; কিন্তু কোরানে এই অর্থে শব্দটির ব্যবহার এক জায়গায়ও করেন নাই।
কোরানে বলিতেছেন : সৃষ্টিতে যাহা কিছু আছে সকলই আল্লাহর আয়াত। অর্থাৎ সৃষ্টি মাত্রই স্রষ্টার পরিচয় বা নিদর্শন বা চিহ্ন। যে কোন সৃষ্টির নিজস্ব কোন সেফাত (অর্থাৎ গুণাবলী) নাই। উহার সকল সেফাত স্রষ্টা হইতে সাময়িকভাবে আগত বা প্রাপ্ত। সুতরাং, সৃষ্টির সেফাতগুলি স্রষ্টার সেফাতের পরিচয় শুধু দান করে। এইরূপে সারা সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টার পরিচয়ই শুধু বিকশিত হইতেছে। সারা সৃষ্টিই আল্লাহর আয়াত। কোরানের কোন বাক্যকে “আল্লাহর আয়াত” অর্থে কোরানে কখনও বলেন নাই।
২। সৃষ্টি স্রষ্টার পরিচয় বহন করে। এই হিসাবে সৃষ্টিকে যেমন আল্লাহর আয়াত বলা হইয়াছে তেমনইভাবে নবীগণ এবং মহামানব-মানবীগণ হইলেন মানুষের জন্য সবচেয়ে উন্নতমানের এবং প্রথম শ্রেণীয় ‘আয়াতাল্লাহ’। ইহার কারণ আল্লাহর পরিচয়-দাতা হিসাবে তাঁহারা হইলেন যে কোন প্রকার সৃষ্টি হইতে শ্রেষ্ঠ। “আমরা দল” ইহার সদস্যগণ হইলেন আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত।
৩। আয়াত বলিতে আল্লাহর পরিচয়-দাতা ধর্মীয় অনুষ্ঠানও বুঝাইয়া থাকে। পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেহেতু আল্লাহর পরিচয় দান করিয়া থাকে সেইহেতু অনুষ্ঠানকেও আল্লাহর পরিচয় বা নিদর্শন বা চিহ্ন বলা যাইতে পারে। এবং সেইরূপ বলাও হইয়াছে।
৪। কোরান ও সুন্নার মধ্যে কোথাও এমন একটি উক্তিও থাকিতে পারে না যাহা দ্বারা কোরান অথবা সুন্নার কোন একটি উক্তিকেও বাতিল করা যাইতে পারে। এইরূপ করিলে আল্লাহতা’লা চঞ্চলমতি, সংশোধনবাদী, অপূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী বলিয়া প্রমাণিত হন। শুধু তাহাই নহে, কোরানে অনেকগুলি বাক্যও মিথ্যা বলিয়া প্রমাণিত হয়, যেমন : “সুন্নাতাল্লাহে লা তাবদিলা” অর্থাৎ আল্লাহর কোন কথা ও কাজের পরিবর্তন হয় না। কোন ধর্মগ্রন্থে আল্লাহ একটি কথা বলিয়া সেই ধর্মগ্রন্থেই পরে উহাকে বাতিল, বদল বা অযোগ্য কথা বলিয়া ঘোষণা করিতে পারেন না। ঠিক তেমনইভাবে আল্লাহর রাসুলও জীবনের কোন একটি কথা ভুল করিয়া উচ্চারণ করিতে পারেন না যাহা তাঁহার নিজের অন্য একটি কথার সঙ্গে অথবা কোরানের কোন একটি কথার সঙ্গে আত্মবিরোধী বলিয়া প্রমাণিত হইতে পারে। আত্মবিরোধী কোন কথা মহানবীর মুখ হইতে বহির্গত হইলে তিনি মহানবী বলিয়া আখ্যায়িত হইতেই পারেন না।
আল্লাহ ও তাঁহার রাসুলের মনোনীত তাঁহার বংশীয় বারজন প্রতিনিধিকে সাধারণ মানুষের পর্যায়ে আনিয়া খেলাফত এবং খেলাফতের পরবর্তী রাজতন্ত্রকে ন্যায়সঙ্গত শাসন ব্যবস্থারূপে সমর্থন দান করিবার জন্য যে সকল অন্যায়-মিথ্যা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছিল “নস্খ ও মনসুখ” তাহাদের মধ্যে অন্যতম একটি ব্যবস্থা। রাসুলকে খাটো করাই ইহার একমাত্র উদ্দেশ্যÑযদিও ইহাতে আল্লাহকে, অনিচ্ছাকৃতভাবে খাটো করিতে হইয়াছে।